কুবুদ্ধি
- মো: নাজমুল হক
ছোটবেলায় দেখতাম অনেক অবস্থাপন্ন মানুষ গরুর বাছুর বা ছাগল, ভেড়া কিনে গরীব লোকের নিকট লালন পালন করতে দিত। শর্ত থাকতো, বড় হলে ঐ গবাদি পশু বিক্রি করলে যে টাকা হবে তা ঐ পশুটির ক্রয় মুল্য বাদে বাকি টাকা সমান দুভাগে ভাগ করে নেবে। অর্থাৎ পশুটির অাসল মালিক ক্রয়মুল্যসহ বর্ধিত বিক্রয়মুল্যের অর্ধেক ভাগ পাবেন। এ প্রথা গ্রামাঞ্চলে দীর্ঘদিন প্রচলিত ছিল।
এক গ্রামের অবস্থাপন্ন এক লোক এমন শর্তে একটি ছোট ছাগল কিনে এক গরীব লোকের নিকট পালতে দিল। বছরখানেক পরে ঐ ছোট ছাগলটি বেশ বড় হলো এবং ক্রয়মূল্যের ২/৩ গুণ বেশি দামে বিক্রি করার মত হলো। ছাগলটির অাসল মালিক ছাগলের লালন পালনকারী লোকটিকে তাগাদা দিতে থাকলো ছাগলটি বিক্রি করে টাকা ভাগ করে দেবার জন্য। কিন্তুু ছাগল পালনকারী লোকটি ছিল অত্যন্ত ধূর্ত এবং স্বার্থপর। লোকটি একদিন চুপিচুপি ছাগলটি বিক্রি করে দিয়ে সব টাকা অাত্নসাৎ করলো। ছাগলদের অাসল মালিককে বলল তাঁর ছাগলটি হারিয়ে গেছে,কোথাও খুজে পাচ্ছেনা। অাসল মালিক ঐ লোকটির বেঈমানি বুঝতে পারছিল। বারবার তার ছাগলের টাকা ভাগ করে দেবার জন্য তাগাদা দিচ্ছিল। কিন্তু ছাগল পালনকারী লোকটি কিছুতেই ছাগল বিক্রির কথা স্বীকার করছিলনা। সে বলছিল তার ছাগল হারিয়ে গেছে। অনেক দরবার সালিশ করেও টাকা না পেয়ে ছাগলের অাসল মালিক অাদালতে মামলা করলো ঐ লোকটির বিরুদ্ধে। অাদালতের শমন পাবার পর ছাগল পালনকারী লোকটি এক উকিলের কাছে গেলেন এবং সব ঘটনা খুলে বলল। উকিল বলল-" ঠিক অাছে,তোমাকে অামি এই মামলা থেকে খালাস করে দেবো,তবে ছাগল বিক্রির অর্ধেক টাকা অামাকে ফি হিসেবে দিতে হবে। অার অাদলতে বিচারকের সামনে অামি যা বলতে বলব ঠিক তাই বলতে হবে।" ছাগল পালনকারী লোকটি উকিলের শর্তে রাজি হলেন। অাদালতে হাজিরার দিন উকিল তার মক্কেলকে শিখিয়ে দিলেন- " বিচারক যত যা কিছুই জিজ্ঞেস করুক না কেন তুমি শুধু "ম্যাহ ম্যাহ ম্যাহ "-করে ছাগলের ডাক ডাকবে। তোমাকে মামলা থেকে ছাড়াবার বাকি দায়িত্ব অামার।" বিচারের কাঠগড়ায় দাড়ানোর পর বিচারক বাদীকে দেখিয়ে অাসামিকে জিজ্ঞেস করলেন,-"তুমিকি ঐ লোকটার কাছ থেকে এক বছর অাগে একটি ছাগল পালতে নিয়েছিলে?" অাসামি তখন উকিলের কথামত শুধু ছাগলের ডাক ডাকা শুরু করলো- "ম্যাহ ম্যাহ ম্যাহ"!
বিচারক যা কিছুই জিজ্ঞেস করেন অাসামি শুধু- ছাগলের মত "ম্যাহ ম্যাহ ম্যাহ" করে ডাকেন। বিরক্ত হয়ে বিচারক অাসামির উকিলকে জিজ্ঞেস করলেন," অাপনার মক্কেল কোন কথার উত্তর দিচ্ছেননা কেন? শুধু- ছাগলের মত "ম্যাহ ম্যাহ " করে ডাকছে কেন?" এবার উকিল বললেন," মহামান্য অাদালত অামার মক্কেল বাদীর কাছ থেকে ১ বছর অাগে সত্যিই একটি ছাগল পালন করতে নিয়েছিলেন,কিন্তুু দুর্ভাগ্যবশত সেই ছাগলটি কিছুদিন অাগে হারিয়ে গিয়েছে। সেই ছাগল হারানোর শোকে অামার মক্কেল এতটাই ভেঙ্গে পড়েছেন যে তাকে যা কিছুই জিজ্ঞেস করা হোকনা কেন,সে শুধু তার প্রিয় ছাগলটির মত "ম্যাহ ম্যাহ" করে ডাকেন। অার কোন কথা তিনি বলতে পারেননা হুজুর!" বিচারক উকিলের কথাকে পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করলেন এবং অাসামিকে বেকসুর খালাস দিলেন। এবার অাদালতের বাইরে এসে উকিল তাঁর অাসামি মক্কেলের কাছে ফি হিসেবে ছাগল বিক্রির অর্ধেক টাকা চাইলেন। অাসামি লোকটি তখন "ম্যাহ ম্যাহ ম্যাহ" করে ছাগলের ডাকই ডাকতে লাগলেন! উকিল যতবারই টাকা চান ততবারই তাঁর মক্কেল ছাগলের মত "ম্যাহ ম্যাহ" করে ডাকতে থাকেন! অবশেষ উকিল নিজেই হাল ছেড়ে দিলেন এবং তাঁর ফি পাবার অাশা বাদ দিলেন। চতুর লোকটি ছাগলের মত "ম্যাহ ম্যাহ" করে ডাকতে ডাকতে বাড়ির পথ ধরলেন!
বিচারক যা কিছুই জিজ্ঞেস করেন অাসামি শুধু- ছাগলের মত "ম্যাহ ম্যাহ ম্যাহ" করে ডাকেন। বিরক্ত হয়ে বিচারক অাসামির উকিলকে জিজ্ঞেস করলেন," অাপনার মক্কেল কোন কথার উত্তর দিচ্ছেননা কেন? শুধু- ছাগলের মত "ম্যাহ ম্যাহ " করে ডাকছে কেন?" এবার উকিল বললেন," মহামান্য অাদালত অামার মক্কেল বাদীর কাছ থেকে ১ বছর অাগে সত্যিই একটি ছাগল পালন করতে নিয়েছিলেন,কিন্তুু দুর্ভাগ্যবশত সেই ছাগলটি কিছুদিন অাগে হারিয়ে গিয়েছে। সেই ছাগল হারানোর শোকে অামার মক্কেল এতটাই ভেঙ্গে পড়েছেন যে তাকে যা কিছুই জিজ্ঞেস করা হোকনা কেন,সে শুধু তার প্রিয় ছাগলটির মত "ম্যাহ ম্যাহ" করে ডাকেন। অার কোন কথা তিনি বলতে পারেননা হুজুর!" বিচারক উকিলের কথাকে পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করলেন এবং অাসামিকে বেকসুর খালাস দিলেন। এবার অাদালতের বাইরে এসে উকিল তাঁর অাসামি মক্কেলের কাছে ফি হিসেবে ছাগল বিক্রির অর্ধেক টাকা চাইলেন। অাসামি লোকটি তখন "ম্যাহ ম্যাহ ম্যাহ" করে ছাগলের ডাকই ডাকতে লাগলেন! উকিল যতবারই টাকা চান ততবারই তাঁর মক্কেল ছাগলের মত "ম্যাহ ম্যাহ" করে ডাকতে থাকেন! অবশেষ উকিল নিজেই হাল ছেড়ে দিলেন এবং তাঁর ফি পাবার অাশা বাদ দিলেন। চতুর লোকটি ছাগলের মত "ম্যাহ ম্যাহ" করে ডাকতে ডাকতে বাড়ির পথ ধরলেন!
নৈতিক শিক্ষা: অপরকে কুবুদ্ধি দিলে তা নিজের উপরও প্রয়োগ হতে পারে।
০৭.৮.১৮
Comments
Post a Comment