"প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রস্তুুতি -২০১৮"


গত ৩০.৭.১৮ তারিখে  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্বখাতে সহকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ৩০ অাগষ্ট-২০১৮ অাবেদনের শেষ তারিখ। অাবেদনের পদ্ধতি, বয়স,  শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কোটার বিশদ বিবরণ বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া অাছে। কেউ বিজ্ঞপ্তি না পেয়ে থাকলে অধিদপ্তরের ওয়েব সাইট www.dpe.gov.bd তে ঢুকে "নোটিশ " লেখার উপর ক্লিক করলে ৩০.৭.১৮ তারিখের pdf file-এ  পুর্ণ বিজ্ঞপ্তি পেয়ে যাবেন। বর্তমান বাংলাদেশের অার্থ-সামাজিক বাস্তবতায় বাড়ির ভাত খেয়ে সরকারি চাকুরি করতে চাইলে সাধারণত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা যেকোন শিক্ষিত ব্যক্তির প্রথম পছন্দ হতে পারে। এবার জেনে নেয়া যাক নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিস্তারিত।
পরীক্ষা পদ্ধতি:
প্রথমে জেলাভিত্তিক  ৮০ নম্বরের পরীক্ষা হয় MCQ পদ্ধতিতে। এটাকেই অনেকে লিখিত পরীক্ষা বলে। পরীক্ষায় প্রার্থীকে একটা Required Mark Carry করতে হয়। কোন প্রার্থী  Required Mark পেলে সাধারণত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ধরা হয় এবং ভাইভার জন্য ডাকা হয়। তবে যতটা জানা যায় পুরুষ এবং মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে Required Mark এর পার্থক্য থাকে।  তবে লিখিত পরীক্ষায় Required Mark কত হবে সেটা অনেকাংশে নির্ভর করে প্রশ্নের কাঠিন্যের উপর এবং বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত পদ সংখ্যার উপর।
MCQ পরীক্ষার প্রশ্নের ধরণ:
MCQ পরীক্ষায় ৮০ টি প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তের জন্য ১ নম্বর দেয়া হয়। ৪ টি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১ নম্বর কাটা হয়। ৮০ টি প্রশ্নের মধ্যে বাংলা বিষয়ের উপর ২০,English এর উপর ২০, গণিতের উপর ২০ এবং সাধারণ জ্ঞান ( বাংলাদেশ ও অান্তর্জাতিক বিষয়) এর উপর ২০ নম্বর থাকে।
ভাইভা বোর্ডের গঠন ও প্রশ্নের ধরণ:
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ভাইভার জন্য ডাকা হয়। ভাইভা বোর্ডের সদস্য থাকেন ৩ জন।
১.জেলা প্রশাসক ( ভাইভা বোর্ডের সভাপতি)
২.সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক(সদস্য)
৩.জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ( সদস্য সচিব)।
ভাইভা বোর্ডের সবাই/যেকোন সদস্যই প্রার্থীকে প্রশ্ন করতে পারেন।  সাধারণত Translation, বঙ্গানুবাদ,সমার্থক শব্দ,বিপরীত শব্দ,সাহিত্য, গণিতের ভগ্নাংশ, জ্যামিতি, দশমিকের যোগ-বিয়োগ/গুণ-ভাগ,সমসাময়িক বিষয় অথবা প্রার্থী যে বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করেছেন সে বিষয়ের উপর প্রশ্ন করা হয়। অনেক সময় কোন বস্তুর ছবিও অাঁকতে দেয়া হয়। তবে ভাইভা বোর্ডে শুধুমাত্র উপস্থিত থাকার জন্য এবং সার্টিফিকেট এর জন্য একটি নির্দিষ্ট নম্বর প্রার্থীকে দেয়া হয়।
লিখিত এবং ভাইভা পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে তৈরিকৃত মেধা তালিকার ভিত্তিতে চুড়ান্তভাবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত প্রার্থীদের স্থায়ী ঠিকানার নিকটবর্তী বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়।
প্রস্তুুতি :
অামার ধারণামতে কোন সাধারণ কোটার পুরুষ প্রার্থী চাকুরি পেতে চাইলে তাকে লিখিত পরীক্ষায় ন্যুনতম ৭০-৭৫ নম্বর পেতে হবে। এর সাথে ভাইভা বোর্ডেও কমপক্ষে ১২ -১৫ নম্বর পেতে হবে। তবেই সাধারণ কোটার কোন পুরুষ প্রার্থীর নিয়োগ পাবার সম্ভাবনা থাকে। অার মহিলাদের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষায় অন্তত ৬০-৬৫ নম্বর পাওয়া দরকার। ভাইভা বোর্ডে অন্তত ১০-১২ নম্বর পেতে হবে। তবেই মহিলা প্রার্থীদের  নিয়োগ পাবার সম্ভাবনা থাকে। কোন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় ভাল করতে চাইলে তাকে অবশ্যই বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুুতি নিতে হবে। অর্থাৎ বাংলা,English, গণিত ও সাধারণ জ্ঞান - প্রতিটি বিষয়ের উপরই সমান গুরুত্বারোপ করতে হবে। কারণ কেউ বাংলায় ২০ এর মধ্যে ২০ পেয়ে English / গণিত/সাধারণ জ্ঞান- এ ২০ এর মধ্যে ১০ পেলে কোন লাভ হবেনা। তাই ৪ টি বিষয়ের উপরই সমান গুরুত্ব দিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে "প্রফেসরস প্রকাশনীর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ গাইডের(সর্বশেষটা এডিশন) ১০০ টি মডেল- প্রশ্নের মধ্যে অন্ততপক্ষে ৭৫- ৮০ টি মডেল টেষ্টের প্রশ্ন ভালভাবে অায়ত্ব করলে এবং অন্তত গত ১ বছরের প্রতি মাসের কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স এর মডেল প্রশ্ন ও চলমান বিশ্বের বিষয়গুলো অায়ত্বে থাকলে লিখিত পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাওয়া সম্ভব। সাধারণ কোটায় চাকুরি প্রার্থীদের ক্ষেত্রে একটা কথা বলা উচিৎ। কথাটা হলো, " শিক্ষাগত যোগ্যতার সমস্ত সার্টিফিকেট পাবার জন্য অাপনি যতটা পড়ালেখা  করেছেন,ভাল একটি চাকুরি পাবার জন্যও অাপনাকে সমপরিমাণ পড়ালেখা ও পরিশ্রম করতে হবে। তবেই হয়তো এদেশে মানসম্মত একটি চাকুরি পাওয়া সম্ভব। এর সাথে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার নিজ হাতে লেখা রিযিকের বিষয়তো থাকছেই।"
গুজব:
অনেকেই বলে টাকা ছাড়া সরকারি চাকুরি হয়না। অাসলে কিছু মানুষ চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে ৫/১০ জন মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়। এই ৫/১০ জনের মধ্য থেকে হয়তো ২/১ জন নিজের যোগ্যতায়ই চাকুরি পায়।তখন টাকা নেওয়া লোকটি চাকুরি হয়েছে যার বা যাদের তার বা তাদের  টাকা রেখে বাকিদের টাকা ফেরৎ দেন। মাঝখান থেকে নিজের যোগ্যতায় চাকুরি হওয়া ব্যক্তিদের টাকা লাভ থেকে যায় ঐ অসৎ লোকটির। তবে ২/১ টি ব্যতিক্রম ঘটনা থাকলেও থাকতে পারে,যেহেতু সব সম্ভবের দেশ -----মোদের বাংলাদেশ । যাইহোক "গুজবে কান কিংবা কানে গুজব "- কোনটাই দেবেননা। নিজের উপর অাত্নবিশ্বাস রাখুন। ইনশাঅাল্লাহ সফল হবেন। অামার লেখাটি পড়ে কারও কোন উপকার হলে তবেই অামার লেখা স্বার্থক। সকলের সাফল্য কামনা করছি। (মো: নাজমুল হক,সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার,ঘাটাইল, টাঙ্গাইল।) তারিখঃ ১০.৮.১৮


http://www.dpe.gov.bd/

Comments

Popular posts from this blog

Out looking is not everything.

অচেনা পথিক

মহাবীর